নীলমাধব থেকে জগন্নাথ মালব রাজ্যের রাজা ইন্দ্রদুম্ন্য। গগনচুম্বি তার প্রাসাদ। একবার সেখানে এক রহস্যময় সন্যাসি উপস্থিত হন। ভারতবর্ষের প্রতিটি তীর্থ তার নখদর্পণে। ইন্দ্রদুম্ন্য ছিলেন পরম বিষ্ণুভক্ত। কথা প্রসঙ্গে সন্যাসি তাকে জানান, শ্রীবিষ্ণু বর্তমানে নীলমাধব রূপে শবর রাজ্যে অত্যন্ত গোপনে শবরদের দ্বারা পূজিত হচ্ছেন। সন্যাসির কথা শুনে ইন্দ্রদুম্ন্য বিষ্ণু দর্শনের জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠেন। নীলমাধবের সন্ধানের জন্য তিনি রাজ পুরোহিতের ভাই বিদ্যাপতিকে শবর রাজ্যে পাঠালেন। শবর রাজ্যে এলেন বিদ্যাপতি। রাজ অতিথিকে শবর রাজ পরম আতিথ্যে বরন করলেন। রাজকন্যা ললিতাকে দিলেন অতিথি সেবার দায়িত্ব। কিছুদিনের মধ্যেই সরলমতি ললিতার মন জয় করে নিলেন চতুর বিদ্যাপতি। ধীরে ধীরে আরো ঘনিষ্ঠ হয় তাদের সম্পর্ক। এক মুহুর্তের জন্য বিদ্যাপতি চোখের আড়াল হলে কেঁদে বুক ভাসান ললিতা। এই সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিলেন বিদ্যাপতি। তিনি এক প্রেমঘন মুহুর্তে ললিতার কাছে নীলমাধব দর্শনের আব্দার করলেন। উভয় সংকটে পড়লেন ললিতা। কারন, গভীর জঙ্গলে নীলমাধবের গুপ্ত মন্দির। তার সন্ধান শুধু শবররা জানেন এবং শবর ছাড়া অন্য সকলের জন্য সে স্থান নিসিদ্ধ। অনে...
সনাতন হিন্দু ধর্মে হাজার হাজার বছর ধরে একাদশী তিথিতে উপবাস থাকার রীতি চলে আসছে। কিন্তু কেন এইদিন উপোস থাকা হয়, আর উপোস থাকলে কী ফল লাভ হয় একথা অনেকেই জানেন না। চলুন তাহলে জেনে নিই একাদশীর ইতিহাস।
কাশীদাসী মহাভারতের শান্তি পর্বে, ৭৪৭ পৃষ্ঠায় একাদশীর ইতিহাস বর্ণনা করা হয়েছে। মহামুনি গালবের পুত্র রূপে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ভদ্রশীল। শৈশবেই তিনি ভগবান বিষ্ণুর ভক্ত হয়ে ওঠেন। বিস্মিত হয়ে বয়োজ্যেষ্ঠরা লক্ষ্য করেন, প্রত্যেক একাদশী তিথিতে বালক ভদ্রশীল উপবাস থেকে হরি মন্দির ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে ভগবান বিষ্ণুর পূজা করেন। একদিন পিতা গালব কৌতূহল বশত পুত্রকে ডেকে এই নতুন বিষ্ণুপূজার বিষয়ে এবং এর ফলাফল সম্পর্কে জানতে চাইলেন। জবাবে ভদ্রশীল বললেন, শুনুন পিতা, আমি জাতিস্মর। পূর্বজন্মের সব কথা আমার মনে আছে। এরপর ভদ্রশীল যা বললেন তা এরকম: গতজন্মে তিনি ছিলেন জম্বুদ্বীপের রাজা ধর্মকীর্তি। অল্প বয়সে কূ-সঙ্গে পড়ে তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠুর ও অত্যাচারী হয়ে ওঠেন। তার শাসনে প্রজাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। একদিন সকালে অভুক্ত অবস্থাতেই তিনি সৈন্য সামন্তদের নিয়ে হরিণ শিকারের জন্য বনে গেলেন। বনের মাঝে একটি হৃষ্টপুষ্ট হরিণকে দেখতে পেয়ে সকলে চারিদিক থেকে তাকে ঘিরে ফেললেন। এরপর তিনি সৈন্যদের বললেন, হরিণটি যেন কোনো ভাবেই পালাতে না পারে। যার কাছ দিয়ে পালাবে আমি তাকে এবং তার বংশের সবাইকে হত্যা করব। একথা শুনে সৈন্যরা সতর্ক হয়ে তীর ধনুক নিয়ে দাড়ালেন। দিনটি ছিল একাদশী। হরিণটি রাজার কথা শুনে মনে মনে ভাবল, আজ একাদশী তিথিতে যদি মৃত্যু হয় তাহলে পশুর জীবন থেকে মুক্তি পাব, আর যদি কোনো ভাবে পালাতে পারি তবে যার কাছ দিয়ে পালাব, অকারণে সে সবংশে মারা পড়বে। তার চেয়ে আমি রাজার কাছ দিয়ে পালানোর চেষ্টা করি। ভাবনা মাত্রই হরিণটি তীব্র গতিতে রাজার দিকে ছুটে গেল। ঘটনার আকস্মিকতায় রাজা ধর্মকীর্তি তড়িঘড়ি বাণ নিক্ষেপ করলেন। কিন্তু তা লক্ষ্য ভ্রষ্ট হল। হরিণটি পালিয়ে গেল। নিজের অক্ষমতায় অত্যন্ত লজ্জিত ও ক্রোধান্বিত হয়ে ঘোড়ায় চড়ে তিনি হরিণের পিছনে ছুটলেন। কিন্তু গভীর দন্ডকারণ্যে দীর্ঘক্ষণ খোঁজাখুঁজির পরেও মৃগের সন্ধান পেলেন না। দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা নামল। ক্ষুধা তৃষ্ণায় অবসন্ন রাজা ঘোড়া থেকে নেমে একটি গাছের নিচে বসে পড়লেন। ধীরে ধীরে চারিদিক অন্ধকার হয়ে এল। তীব্র ঠাণ্ডায় সারা রাত গাছের নিচে পড়ে থেকে রাত্রিশেষে রাজার জীবনাবসান হল। যমদূতেরা এসে তাকে বেঁধে নিয়ে গেল যমপুরীতে। এতদিনের কৃত অপকর্ম ও পাপের কথা চিন্তা করে তিনি শিউরে উঠলেন। কিন্তু তাকে অশ্চর্য করে দিয়ে যমরাজ যমদূতদের ভর্ৎসনা করে বললেন, এ তোরা কাকে ধরে এনেছিস? একাদশীর দিন নির্জলা উপবাসের পর এর মৃত্যু হয়েছে। সেই দিনই শ্রীহরির কৃপায় এই ব্যাক্তি সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হয়েছেন। সঙ্গে সঙ্গে সসম্মানে তাকে বিষ্ণুলোকে পাঠিয়ে দেওয়া হল। পূর্ব জন্মের কাহিনী শেষ করে ভদ্রশীল বললেন পিতা, দীর্ঘকাল স্বর্গের সুখ স্বাচ্ছন্দ্য ভোগ করে আপনার ঔরসে পৃথিবীতে আবার আমার জন্ম হয়েছে। পুত্রের কথা শুনে এরপর থেকে গালব মুনি সপরিবারে উপবাসী থেকে একাদশীর ব্রত পালন করতে লাগলেন।
এখনো গ্রামে গঞ্জে বহু মানুষ একাদশীতে নির্জলা উপবাস থাকেন। একটা নির্দিষ্ট সময় অন্তর উপবাস করা স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী, একথা বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমানিত। বন্ধুরা, কমেন্ট জানান আপনি কখনো উপোস থেকেছেন? এবং উপবাস সম্পর্কে আপনার মতামত কী? ভিডিওটি ভালো লাগলে অবশ্যই লাইক ও শেয়ার করুন। ভালো থাকবেন।
Facts you may know from our channel:
Fasting, benefit of fasting, fasting in Hinduism, ekadashi, ekadashir upos, upobas, galab muni, who was galab, bhadrashil, dharmakirti, jambudwip, গালব, একাদশী, উপবাস একাদশীর উপবাস, নির্জলা উপবাস, উপবাস কেন করা হয়, উপোস, উপোস করলে কি হয়, ভদ্রশীল, জম্বুদ্বীপ, ধর্মকীর্তি, benefit of fasting, fasting, Hindu ritual,
সত্যিই কি হিন্দু ধর্মে ৩৩ কোটি দেবতা রয়েছে? প্রথমেই জানিয়ে রাখি সংস্কৃত ভাষায় 'কোটি' শব্দের দুটি অর্থ রয়েছে। একটি হল 'প্রকার' অপরটি 'সংখ্যা বিশেষ'। অথর্ব বেদের দশম অধ্যায়ে বলা হয়েছে, যস্য ত্রয়স্ত্রিংশদ্ দেবা অঙ্গে সর্বে সমাহিতাঃ। স্কম্মং তং ব্রুহি কতমঃ স্বিদেব সঃ।। অর্থাৎ পরমেশ্বরের প্রভাবে এই ৩৩ দেবতা সমগ্র বিশ্বে ব্যাপ্ত হয়ে আছেন। পরমেশ্বর বলতে পরমব্রহ্মকে বোঝানো হয়েছে। হিন্দু ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী এই পরমব্রহ্ম থেকেই সমগ্র বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড, দেব দেবী, স্থাবর জঙ্গম সমস্ত কিছুর সৃষ্টি হয়েছে। বৃহদারণ্যক উপনিষদেও ৩৩ দেবতার উল্লেখ পাওয়া যায়। এই ৩৩ প্রকার দেবতা হলেন, একাদশ রুদ্র, দ্বাদশ আদিত্য, অষ্টবসু এবং অশ্বিনী কুমারদ্বয়। (১১+১২+৮+২=৩৩) এর থেকে এটা পরিষ্কার যে হিন্দুদের ৩৩ প্রকার দেবতা রয়েছে, ৩৩ কোটি নয়। এবার দেখা যাক এদের সম্পূর্ণ পরিচয়। একাদশ রুদ্র: রুদ্র হলেন সংহারের দেবতা। রুদ্রগনের অধিপতি স্বয়ং মহাদেব। কোনো কোনো গ্রন্থে একাদশ রুদ্রকে ভগবান শিবের ১১টা রূপ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। ঋগ্বেদে একাধিক বার রুদ্রের উল্লেখ পাওয়া যায়। এরা হলেন, মন্যু, ম...
অষ্টবসুর অভিশাপ সুমেরু পর্বতের পাশেই মনোরম পরিবেশে মহর্ষি কশ্যপের তপোবন। সেখানে মৃগশিশু নির্ভয়ে খেলে বেড়ায়, রকমারি ফুলের সৌরভে ও পাখিদের কল কাকলিতে এক স্বর্গীয় পরিবেশ বিরাজ করে। তবে মহর্ষি কশ্যপের তপোবনে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ছিল দিব্য গাভী নন্দিনী। নন্দিনী হল স্বর্গীয় কামধেনু সুরভীর কন্যা। এর দুগ্ধের এমনই গুন যে একবার যদি মর্ত্যবাসী তা পান করতে পারে তবে তাদের আয়ুস্কাল দশ হাজার বছর পর্যন্ত হতে পারে। একদিন অষ্টবসু অর্থাৎ ধরা বা পৃথিবী, ধ্রুব, সোম, অনল, অনিল, প্রভাস, প্রত্যুষ ও অহ কশ্যপের তপোবনে স্ত্রীদের নিয়ে উপস্থিত হলেন। ইতস্তত মনের আনন্দে ঘুরতে ঘুরতে তারা একসময় কশ্যপের গোয়ালে নন্দিনীকে দেখতে পেলেন। গাভীর সৌন্দর্যে মোহাবিষ্ট হয়ে তারা অপলক নয়নে তার দিকে তাকিয়ে রইলেন। অষ্টবসুর অন্যতম প্রভাসের পত্নী নন্দিনীকে দেখে এতটাই আকৃষ্ট হন যে, তিনি বায়না ধরেন, যেভাবেই হোক এই গাভী তার চাই। প্রভাস বললেন, দেবী, মর্ত্যবাসীরা এর জন্য এমন হা হুতাস করতে, আমাদের এর কী প্রয়োজন? তখন তার স্ত্রী বললেন, নরলোকে উশীনরের কন্যা জিতবতী আমার প্রিয় সখী। আমি তার জন্যই এই গাভী চাই। বারংবার আবদারের পর প্রভ...
নীলমাধব থেকে জগন্নাথ মালব রাজ্যের রাজা ইন্দ্রদুম্ন্য। গগনচুম্বি তার প্রাসাদ। একবার সেখানে এক রহস্যময় সন্যাসি উপস্থিত হন। ভারতবর্ষের প্রতিটি তীর্থ তার নখদর্পণে। ইন্দ্রদুম্ন্য ছিলেন পরম বিষ্ণুভক্ত। কথা প্রসঙ্গে সন্যাসি তাকে জানান, শ্রীবিষ্ণু বর্তমানে নীলমাধব রূপে শবর রাজ্যে অত্যন্ত গোপনে শবরদের দ্বারা পূজিত হচ্ছেন। সন্যাসির কথা শুনে ইন্দ্রদুম্ন্য বিষ্ণু দর্শনের জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠেন। নীলমাধবের সন্ধানের জন্য তিনি রাজ পুরোহিতের ভাই বিদ্যাপতিকে শবর রাজ্যে পাঠালেন। শবর রাজ্যে এলেন বিদ্যাপতি। রাজ অতিথিকে শবর রাজ পরম আতিথ্যে বরন করলেন। রাজকন্যা ললিতাকে দিলেন অতিথি সেবার দায়িত্ব। কিছুদিনের মধ্যেই সরলমতি ললিতার মন জয় করে নিলেন চতুর বিদ্যাপতি। ধীরে ধীরে আরো ঘনিষ্ঠ হয় তাদের সম্পর্ক। এক মুহুর্তের জন্য বিদ্যাপতি চোখের আড়াল হলে কেঁদে বুক ভাসান ললিতা। এই সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিলেন বিদ্যাপতি। তিনি এক প্রেমঘন মুহুর্তে ললিতার কাছে নীলমাধব দর্শনের আব্দার করলেন। উভয় সংকটে পড়লেন ললিতা। কারন, গভীর জঙ্গলে নীলমাধবের গুপ্ত মন্দির। তার সন্ধান শুধু শবররা জানেন এবং শবর ছাড়া অন্য সকলের জন্য সে স্থান নিসিদ্ধ। অনে...
Comments
Post a Comment